ঢাকা ০৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




যেভাবে দূর করবেন আপনার ঘরে থাকা ছারপোকাঃ-(ঘরোয়া টিপস)

মোঃ সুরুজ্জামান ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে:
  • প্রকাশিত : ০৯:৪২:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২ ২১৫৭ বার পঠিত
কালের ধারা ২৪, অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
print news

যেভাবে দূর করবেন আপনার ঘরে থাকা ছারপোকাঃ-(ঘরোয়া টিপস)

মোঃ সুরুজ্জামান ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে:

বিজ্ঞাপন

আজকাল অনেকেই ছারপোকার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রাতে চোখের ঘুম হারাম করার জন্য ওস্তাদ এই পোকা। বাসা বাড়িতে, সোফা, বিছানাপত্র, পুরাতন কাপড়-চোপড়, লেপতোষকে এই পোকার উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়। ক্ষুদ্র এই জীবটিকে অনেকে রক্তচোষা পোকা হিসেবে চিনে থাকেন। রক্তই এই পোকার প্রধান খাদ্য। যার কারণে মানুষ যেখানে অবস্থান করে সেখানে এই পোকার উপদ্রব একটু বেশি। ত্বকেরও ক্ষতি করে থাকে এই পোকা।

 

আসুন কিভাবে এই রক্তচোষা জীবটির উপদ্রব থেকে বাঁচা যায় তা নিয়ে আলোচনা করি।

 

বিভিন্ন ধরণের কৌশল ও টিপস অবলম্বন করলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

 

১. ঘর পরিষ্কারঃ নিয়মিত ঘর-দুয়ার পরিষ্কার রাখলে সহজে এই পোকার আক্রমণ ঘটে না। ঘরের চিপা, কোনায়, বিছানাপত্র ভালোভাবে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। দীর্ঘদিন বিছানাপত্র অপরিষ্কার বা স্যাতস্যাতে বা রোদে শুকা না দিলে ছারপোকার আক্রমণ ঘটে থাকে।

 

২. আক্রান্ত স্থান চিহ্নিত করাঃ আক্রান্ত স্থান চিহ্নিত করে কেরোসিন, ন্যাপথলিন, কর্পূর বা সেভলন দিয়ে রাখলে সেখানে আর এই পোকা আক্রমণ করবে না। আক্রান্ত স্থান সাধারণত কীট বা আবাস্থল কালো হয়ে থাকে। কোকড়ানো বা মুড়ানো, অপস্পষ্ট দেখা যায়। ন্যাপথলিনো, স্যাভলন ও ডিটারজেন্ট পাউডার পরিমানমতো দিয়ে স্প্রেনাশক বানিয়ে ছিটিয়ে দিলে ছারপোকা দূর হবে। আকাশী গাছের পাতা বিছিয়ে দিলেও ছারপোকা পালাবে। এ পাতার গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে পারে না।

 

৩. রোদে শুকানোঃ কাপড়-চোপড় নিয়মিত রোদে শুকালে এই পোকা বাসা বাধতে পারে না। কীট ধ্বংস হয়। তাই নিয়মিত অন্তত সপ্তাহে একদিন যখন রোদের মাত্রা অত্যাধিক তখন শুকাতে দিতে হয়। এই পোকা তাপ সহ্য করতে পারে না। ফলে তাপ পেয়ে দ্রুত বের হয়ে আসে। এই পদ্ধতি একটি কার্যকরি পদ্ধতি।

 

৪. ন্যাপথলিন বা কর্পূর ব্যবহারঃ ন্যাপথলিন বা র্কপূর ব্যবহার আপনাকে ভালো ফল দেবে। এর গন্ধে ছারপোকা কাছে আসতে পারে না। শুধু তাই নয় এটি ব্যবহারে অন্যান্যা পোকামাকড়ও বিছানার কাছে আসে না। বিছানাপত্র- ল্যাপতোষক বা আপনার সোফা উচ্চ তাপমাত্রার রোদে শুকিয়ে বিছনা বিছানোর পর ল্যাপথন বা কর্পূর ছিটিয়ে দিন। প্রয়োজনে ন্যাপথলিন গুড়ো করে দেয়া যেতে পারে। এতে অল্প পরিমান দিয়েও ভালো করে দেওয়া যায়। বিছানার সর্বত্র ছিটানো যায়। এভাবে নিয়মিত ছয় সপ্তাহ করলে ঘর থেকে ছারপোকা ইনশাল্লাহ দূর হবে।

 

৫. কীট ধ্বংসঃ পূর্ণবয়স্ক রক্তচোষা এই জীবটি প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ টা করে ডিম দেয়। যার ফলে দ্রুত এরা বংশ বিস্তার করে থাকে। দ্রত সময়ে আরামদায়ক ঘুম নষ্ট করে ছারপোকা। শরীরে ইনফেকশন সৃষ্টিও করতে পারে এই পোকা। কীটগুলো সাধারণত সাদা চাউলের কণার মতো বা দানাদার এর মতো হয়ে থাকে। কীট গুলো এতো শক্তিশালী যে, ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সহজে ধ্বংস হয় না। সাধারণ ঠাণ্ডা পানিতে তিন দিন পর্যন্তও কীটগুলো জীবিত থাকে। তাই কীটগুলো সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়েঁ ফেলতে  হয়।

 

৬. আলোর ব্যবহারঃ এই পোকা আলোকে ভয় পায়। তাই এরা সাধারণত দিনের আলোতে চলাচল কম করে থাকে। মানুষের শরীরে আক্রমণ করে রাতে। রক্তচোষার খেলায় মেতে উঠে । রাতে বিছানায় আলোর ব্যবস্থা থাকলে আক্রমন করে না। আসবাবপত্র বা বিছানাপত্র উষ্ণ গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে।

 

৭. কেরোসিনের ব্যবহারঃ পোকার উপদ্রব বেশি হলে কেরোসিন ব্যবহার করতে হয়। কেরোসিন দূর্গন্ধ হওয়ার ছারপোকা এর গন্ধ সহ্য করতে পারে না। সাধারণত ল্যাপ-তোষকে আক্রমন করলে, ল্যাপ তোষক উচ্চ রোদে শুকিয়ে যখন বিছানাপত্র বিছনায় বিছানো হবে তখন উভয় দিকে কেরোসিন স্প্রে করতে হবে। এর গন্ধে ছারপোকা পালাবে। এই পদ্ধতিও একটি অন্যরকম কার্যকরী পদ্ধতি।

 

৮. আক্রান্ত কাপড়-চোপড় গরম পানিতে ধৌতঃ আক্রান্ত কাপড় চোপড় ১০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রাখতে হয়। এরপর রোদে শুকাতে দিতে হয়। এতে কীট ধ্বংস হবে পাশাপাশি ছোটবড় সকল ছারপোকা মারা যাবে। উপদ্রব বেশি হলে এরকম করার প্রয়োজন হতে পারে। গরম পানি কীট ধ্বংসে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

৯. আগুনে পুড়ানোঃ কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্রে ছারপোকার পরিমান অত্যাধিক বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তখন ছারপোকার আবাস্থাল আক্রান্ত কাপড়চোপড় আগুনে পুড়িয়েঁ ফেলতে হবে। এতে করে ছারপোকার বংশ নিঃবংশ হবে। ঘর হবে ছারপোকা মুক্ত।

 

১০. স্প্রেনাশক ওষধ ছিটানোঃ এন্টি বেডডাগ, নব্বো, ম্যাক্কো, পিন্ক হ্যাবেন, এন্টি ফসফরাত ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন স্প্রেনাশক ওষধ ব্যবহার করেও ছারপোকা দমন করা যায়।

 

বিঃদ্রঃ [ লেখাগুলো বিভিন্ন বই, পত্রিকা, গভেষনা ও বাস্তবে প্রয়োগ করে লিখা হয়েছে। তাই কেউ এই সমস্যায় পড়লে নিজ দায়িত্বে ট্রাই করতে পারেন।]

ট্যাগস :




ফেসবুকে আমরা







x

যেভাবে দূর করবেন আপনার ঘরে থাকা ছারপোকাঃ-(ঘরোয়া টিপস)

প্রকাশিত : ০৯:৪২:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২
print news

যেভাবে দূর করবেন আপনার ঘরে থাকা ছারপোকাঃ-(ঘরোয়া টিপস)

মোঃ সুরুজ্জামান ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে:

বিজ্ঞাপন

আজকাল অনেকেই ছারপোকার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রাতে চোখের ঘুম হারাম করার জন্য ওস্তাদ এই পোকা। বাসা বাড়িতে, সোফা, বিছানাপত্র, পুরাতন কাপড়-চোপড়, লেপতোষকে এই পোকার উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়। ক্ষুদ্র এই জীবটিকে অনেকে রক্তচোষা পোকা হিসেবে চিনে থাকেন। রক্তই এই পোকার প্রধান খাদ্য। যার কারণে মানুষ যেখানে অবস্থান করে সেখানে এই পোকার উপদ্রব একটু বেশি। ত্বকেরও ক্ষতি করে থাকে এই পোকা।

 

আসুন কিভাবে এই রক্তচোষা জীবটির উপদ্রব থেকে বাঁচা যায় তা নিয়ে আলোচনা করি।

 

বিভিন্ন ধরণের কৌশল ও টিপস অবলম্বন করলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

 

১. ঘর পরিষ্কারঃ নিয়মিত ঘর-দুয়ার পরিষ্কার রাখলে সহজে এই পোকার আক্রমণ ঘটে না। ঘরের চিপা, কোনায়, বিছানাপত্র ভালোভাবে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। দীর্ঘদিন বিছানাপত্র অপরিষ্কার বা স্যাতস্যাতে বা রোদে শুকা না দিলে ছারপোকার আক্রমণ ঘটে থাকে।

 

২. আক্রান্ত স্থান চিহ্নিত করাঃ আক্রান্ত স্থান চিহ্নিত করে কেরোসিন, ন্যাপথলিন, কর্পূর বা সেভলন দিয়ে রাখলে সেখানে আর এই পোকা আক্রমণ করবে না। আক্রান্ত স্থান সাধারণত কীট বা আবাস্থল কালো হয়ে থাকে। কোকড়ানো বা মুড়ানো, অপস্পষ্ট দেখা যায়। ন্যাপথলিনো, স্যাভলন ও ডিটারজেন্ট পাউডার পরিমানমতো দিয়ে স্প্রেনাশক বানিয়ে ছিটিয়ে দিলে ছারপোকা দূর হবে। আকাশী গাছের পাতা বিছিয়ে দিলেও ছারপোকা পালাবে। এ পাতার গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে পারে না।

 

৩. রোদে শুকানোঃ কাপড়-চোপড় নিয়মিত রোদে শুকালে এই পোকা বাসা বাধতে পারে না। কীট ধ্বংস হয়। তাই নিয়মিত অন্তত সপ্তাহে একদিন যখন রোদের মাত্রা অত্যাধিক তখন শুকাতে দিতে হয়। এই পোকা তাপ সহ্য করতে পারে না। ফলে তাপ পেয়ে দ্রুত বের হয়ে আসে। এই পদ্ধতি একটি কার্যকরি পদ্ধতি।

 

৪. ন্যাপথলিন বা কর্পূর ব্যবহারঃ ন্যাপথলিন বা র্কপূর ব্যবহার আপনাকে ভালো ফল দেবে। এর গন্ধে ছারপোকা কাছে আসতে পারে না। শুধু তাই নয় এটি ব্যবহারে অন্যান্যা পোকামাকড়ও বিছানার কাছে আসে না। বিছানাপত্র- ল্যাপতোষক বা আপনার সোফা উচ্চ তাপমাত্রার রোদে শুকিয়ে বিছনা বিছানোর পর ল্যাপথন বা কর্পূর ছিটিয়ে দিন। প্রয়োজনে ন্যাপথলিন গুড়ো করে দেয়া যেতে পারে। এতে অল্প পরিমান দিয়েও ভালো করে দেওয়া যায়। বিছানার সর্বত্র ছিটানো যায়। এভাবে নিয়মিত ছয় সপ্তাহ করলে ঘর থেকে ছারপোকা ইনশাল্লাহ দূর হবে।

 

৫. কীট ধ্বংসঃ পূর্ণবয়স্ক রক্তচোষা এই জীবটি প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ টা করে ডিম দেয়। যার ফলে দ্রুত এরা বংশ বিস্তার করে থাকে। দ্রত সময়ে আরামদায়ক ঘুম নষ্ট করে ছারপোকা। শরীরে ইনফেকশন সৃষ্টিও করতে পারে এই পোকা। কীটগুলো সাধারণত সাদা চাউলের কণার মতো বা দানাদার এর মতো হয়ে থাকে। কীট গুলো এতো শক্তিশালী যে, ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সহজে ধ্বংস হয় না। সাধারণ ঠাণ্ডা পানিতে তিন দিন পর্যন্তও কীটগুলো জীবিত থাকে। তাই কীটগুলো সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়েঁ ফেলতে  হয়।

 

৬. আলোর ব্যবহারঃ এই পোকা আলোকে ভয় পায়। তাই এরা সাধারণত দিনের আলোতে চলাচল কম করে থাকে। মানুষের শরীরে আক্রমণ করে রাতে। রক্তচোষার খেলায় মেতে উঠে । রাতে বিছানায় আলোর ব্যবস্থা থাকলে আক্রমন করে না। আসবাবপত্র বা বিছানাপত্র উষ্ণ গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে।

 

৭. কেরোসিনের ব্যবহারঃ পোকার উপদ্রব বেশি হলে কেরোসিন ব্যবহার করতে হয়। কেরোসিন দূর্গন্ধ হওয়ার ছারপোকা এর গন্ধ সহ্য করতে পারে না। সাধারণত ল্যাপ-তোষকে আক্রমন করলে, ল্যাপ তোষক উচ্চ রোদে শুকিয়ে যখন বিছানাপত্র বিছনায় বিছানো হবে তখন উভয় দিকে কেরোসিন স্প্রে করতে হবে। এর গন্ধে ছারপোকা পালাবে। এই পদ্ধতিও একটি অন্যরকম কার্যকরী পদ্ধতি।

 

৮. আক্রান্ত কাপড়-চোপড় গরম পানিতে ধৌতঃ আক্রান্ত কাপড় চোপড় ১০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রাখতে হয়। এরপর রোদে শুকাতে দিতে হয়। এতে কীট ধ্বংস হবে পাশাপাশি ছোটবড় সকল ছারপোকা মারা যাবে। উপদ্রব বেশি হলে এরকম করার প্রয়োজন হতে পারে। গরম পানি কীট ধ্বংসে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

৯. আগুনে পুড়ানোঃ কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্রে ছারপোকার পরিমান অত্যাধিক বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তখন ছারপোকার আবাস্থাল আক্রান্ত কাপড়চোপড় আগুনে পুড়িয়েঁ ফেলতে হবে। এতে করে ছারপোকার বংশ নিঃবংশ হবে। ঘর হবে ছারপোকা মুক্ত।

 

১০. স্প্রেনাশক ওষধ ছিটানোঃ এন্টি বেডডাগ, নব্বো, ম্যাক্কো, পিন্ক হ্যাবেন, এন্টি ফসফরাত ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন স্প্রেনাশক ওষধ ব্যবহার করেও ছারপোকা দমন করা যায়।

 

বিঃদ্রঃ [ লেখাগুলো বিভিন্ন বই, পত্রিকা, গভেষনা ও বাস্তবে প্রয়োগ করে লিখা হয়েছে। তাই কেউ এই সমস্যায় পড়লে নিজ দায়িত্বে ট্রাই করতে পারেন।]