১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করে সুবিধা বঞ্চিত পৌর নাগরিকদের পরামর্শে ও একাত্মতায় চুনারুঘাট পৌরসভাকে একটা উন্নত সেবা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাই। পৌরবাসীর সমর্থন সহযোগিতা ও দোয়া নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলে, এজন্য যা যা করা দরকার আমি তা-ই করবো। জনপ্রতিনিধি হয়ে জনসেবায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা আমার স্বপ্ন।’ বৃহষ্পতিবার ( ৫ নভেম্বর) রাতে ‘কালের ধারা ২৪’-র সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন স্বপ্নের কথা শোনালেন আসন্ন চুনারুঘাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী যুবনেতা বজলুর রশিদ দুলাল । সজ্জন, সুবক্তা ও তরুণ এ নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির নির্বাহী সদস্য।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ তরুণ মেয়র প্রার্থীর সাথে আলাপকালে চুনারুঘাট পৌরসভাকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা জানান।
বজলুর রশিদ দুলাল বলেন, ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৫ বছর পার করেছে আমাদের এ পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভার শুরু থেকে অদ্যাবধি আক্ষরিক কোনো উন্নতি দেখা যায়নি, নাগরিকের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও এর দৃশ্যমান অবস্থা নিম্নগামী।
বিস্তারিতভাবে তিনি বলেন, একটি পৌরসভা উন্নত নাগরিকতা গঠনে সবচেয়ে বেশী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের জানামতে, পৌরসভার কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে- আবাসিক, শিল্প এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ ও পয়ঃ নিষ্কাশন; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে রাস্তা, ফুটপাথ, জনসাধারণের চলাচল, যাত্রী এবং মালামালের সুবিধার্থে টার্মিনাল নির্মাণ; পরিবহন ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা, পথচারীদের সুবিধার্থে যাত্রী ছাউনী, সড়ক বাতি, যানবাহনের পার্কিং স্থান এবং বাস- রিকশা- ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এর ব্যবস্থা করা; অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন; নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ; বাজার ও কসাইখানা ব্যবস্থাপনা।
এছাড়াও সামাজিক অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্ত বিনোদন, আমোদ প্রমোদ এবং সাংস্কৃতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসারে সহায়তা, পৌর এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যাদি আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করবো।
তিনি বলেন, আমাদের নীতিমালায় কি আছে এবং আমরা কতটুকু পেয়েছি তা চারদিকে তাকালেই দেখতে পাই। তবে, আমরা নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। কারণ, সকলেই জানেন, আমরা কোনো প্রকারের দুর্নীতি করবো না, এবং একজন নাগরিক হিসেবে এসব আমারও অধিকার।
পৌর এলাকার যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ, অপচয়ের আয়োজনের পাশাপাশি আছে দুর্নীতির পাহাড়, এবং এটাকে আধুনিক নাগরিকের প্রতিষ্ঠান না বলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বলাই যুক্তিযুক্ত- এমন টা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতোদিন ধরে পৌরসভার নাগরিকরা নানাদিক দিয়ে বঞ্চিত ছিলেন। এ বঞ্চনার হাত থেকে আমি তাদের রক্ষা করতে চাই’- এমন অঙ্গীকার নিয়ে পৌরসভার আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থিতা দাবী করছেন তিনি।
দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকা পৌরসভাকে আলোকিত করতে চাই। নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন উন্নত-আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হবে। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে পৌরসভার চেহারা পাল্টে যাবে বলেও তিনি জোর দিয়ে জানান।
অনেকটা জোর নিয়ে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করার কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। উপজেলায় আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিভাবক। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও আমাদের দলের। আমিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পৌরসভার দায়িত্ব পেতে আগ্রহী। তারপর পরিকল্পনা মাফিক শুধু এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
বজলুর রশিদ দুলাল ছাত্র জীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তখন অবিরাম যুক্তি নির্ভর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সাহসী ও সজ্জন হিসেবে অনেকের সুদৃষ্টিতে পড়েন তিনি। ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আলাওল শাখার প্রথমে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন এবং হল শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। সেই পথ বেয়ে তিনি এখন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের নির্বাহী সদস্য।
তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে প্রাসঙ্গিক অতীত। ১৯৯২ সালে দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে। তারপর হয়ে উঠেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। কলেজে পড়াকালীন তিনি ছাত্রনেতা হিসেবে সকলের নজর কাড়েন এবং হয়ে উঠেন একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক। তখন কলেজ ছাত্রলীগের কলেজ কমিটি না থাকলেও তিনি ছিলেন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ক্লাস কমিটির সদস্য।
১৯৯৫ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এ প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে বজায় রাখেন নেতৃত্বশীলতার ধারাবাহিকতা। তৎকালে বিএনপি- সরকার ক্ষমতায় থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাতে। ছাত্রশিবিরের নির্মমতা ও অত্যাচারের কাছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও তখন কোণঠাসা। ছাত্রলীগ তথা প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নাম মুখে আনাই তখন পাপ ছিল।
১৯৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাতে গোনা অল্পসংখ্যক কর্মীরা শুরু করে সাম্প্রদায়িকতা- বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাতে আহত ও নিহত হন। ঝুঁকির মুখে থেকেও ছাত্রশিবিরের দখলে থাকা আলাওল হল শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিশেষ নজর দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ধর্মীয় ও উগ্র মৌলবাদীদের উৎখাত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য প্রিয় নেত্রীর প্রতি আজো তিনি অকুণ্ঠচিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পরীক্ষিত সৈনিক হিসেবে আলাওল হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। এর ফলে তিনি ছাত্রশিবিরের কুপানলে পড়েন এবং তাঁকে দুইটি হত্যা মামলার আসামী করে মিথ্যা মামলা দায়ের করে ছাত্রশিবির।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সেই কৃতজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছাকাছি থেকে সমস্যা ও সমাধানে কাজ করার সুযোগ পাব বেশি, যে সুযোগ এমপি মন্ত্রী বা অন্যান্য প্রতিনিধিদের বেলায় নেই। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সম্পন্ন করার পর ফিরে আসেন জন্মভুমি চুনারুঘাটে। এখানে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ পরিবারের রাজনীতিতে। ২০০১ সালের পর থেকে দুর্দিনে অর্থ সামর্থ্য নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পাশে দাঁড়ান এবং স্থানীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখেন।
উল্লেখ্য, তিনি চুনারুঘাটের আয়তন গ্রামের সুপরিচিত জজ বাড়ির ছিদ্দিক মিয়ার পুত্র এবং বিচারপতি আব্দুল হাই সাহেবের ভাতিজা। তাঁর পরিবারের অনেক সদস্য অতীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির প্রথম সারির সৈনিক হিসেবে পরিচিত। আবার সদস্যদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের জেলা ও উপজেলা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আট দশমিক এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার প্রায় ২৫ হাজারের অধিক অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ভোটারের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বিজয় হলে এ বিজয় হবে মানুষের দোয়া ও আকাংখা ও প্রত্যাশার ফল, এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় এবং জরাগ্রস্ত ১৯ বছরের এ পৌরসভা উন্নয়নের পথে এক ধাপ এগোনো।
এ পৌর শহরকে উন্নত করার প্রথম প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জন্মের পর বিগত দিনে পৌরসভার উন্নতি যতটুকু না হয়েছে আগামী ৫ বছরে তার তুলনামূলক চিত্র সবাই দেখতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।