ঢাকা ০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ




গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্কুল ছাত্র সিহাব হত্যাকান্ড, মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় হত্যা করে ৩ বখাটে

জাহাঙ্গীর আলম বাদল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
  • প্রকাশিত : ০৬:১০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২ ৪৯৪ বার পঠিত
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
print news

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্কুল ছাত্র সিহাব হত্যাকান্ড, মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় হত্যা করে ৩ বখাটে

জাহাঙ্গীর আলম বাদল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনির ছাত্র শাহরিয়ার রহমান সিহাব (১৪) হত্যাকান্ডের ৭দিন পর গত মঙ্গলবার গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে হত্যাকারিদের নাম এবং কারন প্রকাশ করেছে। মুলত মুক্তিপণের কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারিরা হলেন শান্তিরাম ইউনিয়নের মধ্য শান্তিরাম গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক সুমন, শান্তিরাম কালিয়ারছিড়া গ্রামের মনজু মিঞার ছেলে কাবিল হোসেন জিন্নাহ মিয়া ও শান্তিরাম ফোরকানিয়া গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে বাদশা মিয়া।

সিহাব বেলকা ইউনিয়নের পূর্ব বেলকা গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আইভি পরিবাহনের পরিবহনের মালিক আনিছুর রহমানের ছেলে। জানা গেছে, ঈদুল আযহার ১৫দিন আগে থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণের আশায় মাদকাসক্ত বখাটে ওই তিন শিশু সিহাবকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। যানবাহনের অভাবে তারা সিহাবকে অপহরণ করতে ব্যার্থ হয়। এরপর গত ১৪ জুন দিবাগত রাতে সিহাবের বিরুদ্ধে রিয়া নামের একটি মেয়েকে যৌন হয়রানি অভিযোগ এনে মোবাইল ফেনে জিন্না তাকে বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে ডেকে নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ওই সময় সুমন একটি ভাড়াটে মোটরসাইকেল নিয়ে ওই স্থানে আসে এবং মেয়েটির সাথে মোকাবেলা করার কথা বলে সিহাবকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে ধুবনী কারিগরি কলেজমাঠে নিয়ে যায়।  সেখানে বাদশা মিয়া এসে উপস্থিত হয়। তারপর একটি মোটরসাইকেলে সিহাব, সুমন, বাদশা ও জিন্নাসহ ৪জন উঠে সীচাবাজারে যায়। সেখান থেকে রাতে আবারও ধুবনী কারিগরি কলেজ মাঠে ফিরে এসে সিহাবকে ঘুমের ট্যাবলেট মিশানো জুস খাওয়ায় এবং ইনজেকশন পুশ করে। অচেতন অবস্থায় সিহাবকে ধুবনী বাজারে জিন্নার ভাড়াকরা আর্মি রেজাউলের বাসায় নিয়ে রুমের মধ্যে তালাবন্ধ করে রাখে। গভীর রাতে ওই তিনজনের গতিবিধি সন্দেহ হলে বাসার মালিক তাদের সাথে তর্কবির্তক করে। তখন ওই তিনজন বকেটে সিহাবকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে চলে যায়। রাত আড়াইটার সময় আবার তারা ওই বাসায় ফিরে এসে অচেতন সিহাবকে নিয়ে লালচামার তিস্তার খেয়াঘাটে নিয়ে বস্তায় ভরে শ্বাসরুদ্ধ করে সিহাবের মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে নদীর ধারে ফেলে রেখে চলে যায় ওরা। প্রকাশ থাকে যে, ১৪ জুন রাত দশটার সময় বেলকা চৌরাস্তা মোড়রের আনিছুরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে সিহাব বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে বাড়ির দুরত্ব ৫০০ মিটার। রাত এগারোটার সময় আনিছুর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় ছেলে বাড়িতে নেই। এসময় তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। এরপর থেকে খোঁজাখুজি শুরু হয়। ১৫ জুন সকাল এগারোটা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান না পাওয়ায় থানায় জিডি করে বাবা।

আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে

বিজ্ঞাপন

ইতিমধ্যে সিহাব নিখোঁজের খবরটি ছড়িয়ে পরে গোটা উপজেলায়। এরই এক পর্যায় দুপুরে লালচামার তিস্তার খেয়াঘাটে একটি শিশুর মরাদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুঁটে গিয়ে সিহাবের লাশ সনাক্ত করে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরুতহাল রিপোট তৈরি করে এবং লাশ ময়না তদন্তের মর্গে পাঠায়। ১৬ জুন সকালে বেলকা ফুটবল খেলার মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।  সিহাবের বাবা আনিছুর রহমান জানান, তার সাথে কাউরো কোন শক্রুতা ছিল না।  সে খুনিদের সঠিক বিচার দাবি করেছেন। সুন্দরগঞ্জ থানার ইনচার্জ সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম জানান, প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করার কারণে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়নি।  দেরিতে হলেও প্রকৃত খুনিদের বের করতে পেরেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  গত মঙ্গলবার আসামিদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

 




ফেসবুকে আমরা







x

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্কুল ছাত্র সিহাব হত্যাকান্ড, মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় হত্যা করে ৩ বখাটে

প্রকাশিত : ০৬:১০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২
print news

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্কুল ছাত্র সিহাব হত্যাকান্ড, মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় হত্যা করে ৩ বখাটে

জাহাঙ্গীর আলম বাদল, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনির ছাত্র শাহরিয়ার রহমান সিহাব (১৪) হত্যাকান্ডের ৭দিন পর গত মঙ্গলবার গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে হত্যাকারিদের নাম এবং কারন প্রকাশ করেছে। মুলত মুক্তিপণের কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারিরা হলেন শান্তিরাম ইউনিয়নের মধ্য শান্তিরাম গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক সুমন, শান্তিরাম কালিয়ারছিড়া গ্রামের মনজু মিঞার ছেলে কাবিল হোসেন জিন্নাহ মিয়া ও শান্তিরাম ফোরকানিয়া গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে বাদশা মিয়া।

সিহাব বেলকা ইউনিয়নের পূর্ব বেলকা গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আইভি পরিবাহনের পরিবহনের মালিক আনিছুর রহমানের ছেলে। জানা গেছে, ঈদুল আযহার ১৫দিন আগে থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণের আশায় মাদকাসক্ত বখাটে ওই তিন শিশু সিহাবকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। যানবাহনের অভাবে তারা সিহাবকে অপহরণ করতে ব্যার্থ হয়। এরপর গত ১৪ জুন দিবাগত রাতে সিহাবের বিরুদ্ধে রিয়া নামের একটি মেয়েকে যৌন হয়রানি অভিযোগ এনে মোবাইল ফেনে জিন্না তাকে বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে ডেকে নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ওই সময় সুমন একটি ভাড়াটে মোটরসাইকেল নিয়ে ওই স্থানে আসে এবং মেয়েটির সাথে মোকাবেলা করার কথা বলে সিহাবকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে ধুবনী কারিগরি কলেজমাঠে নিয়ে যায়।  সেখানে বাদশা মিয়া এসে উপস্থিত হয়। তারপর একটি মোটরসাইকেলে সিহাব, সুমন, বাদশা ও জিন্নাসহ ৪জন উঠে সীচাবাজারে যায়। সেখান থেকে রাতে আবারও ধুবনী কারিগরি কলেজ মাঠে ফিরে এসে সিহাবকে ঘুমের ট্যাবলেট মিশানো জুস খাওয়ায় এবং ইনজেকশন পুশ করে। অচেতন অবস্থায় সিহাবকে ধুবনী বাজারে জিন্নার ভাড়াকরা আর্মি রেজাউলের বাসায় নিয়ে রুমের মধ্যে তালাবন্ধ করে রাখে। গভীর রাতে ওই তিনজনের গতিবিধি সন্দেহ হলে বাসার মালিক তাদের সাথে তর্কবির্তক করে। তখন ওই তিনজন বকেটে সিহাবকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে চলে যায়। রাত আড়াইটার সময় আবার তারা ওই বাসায় ফিরে এসে অচেতন সিহাবকে নিয়ে লালচামার তিস্তার খেয়াঘাটে নিয়ে বস্তায় ভরে শ্বাসরুদ্ধ করে সিহাবের মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে নদীর ধারে ফেলে রেখে চলে যায় ওরা। প্রকাশ থাকে যে, ১৪ জুন রাত দশটার সময় বেলকা চৌরাস্তা মোড়রের আনিছুরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে সিহাব বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে বাড়ির দুরত্ব ৫০০ মিটার। রাত এগারোটার সময় আনিছুর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় ছেলে বাড়িতে নেই। এসময় তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। এরপর থেকে খোঁজাখুজি শুরু হয়। ১৫ জুন সকাল এগারোটা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান না পাওয়ায় থানায় জিডি করে বাবা।

আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে

বিজ্ঞাপন

ইতিমধ্যে সিহাব নিখোঁজের খবরটি ছড়িয়ে পরে গোটা উপজেলায়। এরই এক পর্যায় দুপুরে লালচামার তিস্তার খেয়াঘাটে একটি শিশুর মরাদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুঁটে গিয়ে সিহাবের লাশ সনাক্ত করে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরুতহাল রিপোট তৈরি করে এবং লাশ ময়না তদন্তের মর্গে পাঠায়। ১৬ জুন সকালে বেলকা ফুটবল খেলার মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।  সিহাবের বাবা আনিছুর রহমান জানান, তার সাথে কাউরো কোন শক্রুতা ছিল না।  সে খুনিদের সঠিক বিচার দাবি করেছেন। সুন্দরগঞ্জ থানার ইনচার্জ সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম জানান, প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করার কারণে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়নি।  দেরিতে হলেও প্রকৃত খুনিদের বের করতে পেরেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  গত মঙ্গলবার আসামিদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।